FB Fan PAGE mNews24
কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের
শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান (তনু) হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠছে
মানুষ। এ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে। চলছে
মিছিল-মানববন্ধন-প্রতিবাদী সভা। অবরোধ করা হয়েছে মহাসড়ক।
গতকাল রোববারও
ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়
অনুষ্ঠিত এসব কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ
নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাঁরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে
দ্রুত সোহাগী হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
কর্মসূচিতে
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সোহাগী হত্যার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না। এটা সরকার ও
রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। সোহাগী হত্যার বিচার না হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে
না। তাই যত দ্রুত সম্ভব হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায়
আনতে হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
২০
মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা সেনানিবাসের পাহাড় হাউস এলাকায় সোহাগী
জাহানের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী
ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা
মামলা করেন। হত্যা মামলাটি শুক্রবার পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে
হস্তান্তর করা হয়। গত শুক্রবার রাতে র্যা ব ও শনিবার পুলিশ সদস্যরা
সোহাগীর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।
শাহবাগে সড়ক অবরোধ:
হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচির আহ্বানকারীদের একজন
অনুপম বলেন, বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন ও
সমাবেশ করা হয়। পরে মিছিল নিয়ে তাঁরা শাহবাগ মোড়ে যান। শাহবাগে সড়ক অবরোধ
শেষে ঘোষণা দেওয়া হয়, আজ সোমবারের মধ্যে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে না
পারলে শাহবাগে লাগাতার অবরোধ শুরু করা হবে। এ ছাড়া আজ বেলা ১১টায় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে মানববন্ধন হবে।
ঢাকায়
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল বিকেলে মানববন্ধন করেছে সামাজিক প্রতিরোধ
কমিটি। একই স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের স্থায়ী কমিটির সভায় হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও
বিচার দাবি করা হয়েছে।
কুমিল্লায় গণজাগরণ মঞ্চ:
কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে বেলা তিনটায় সমাবেশ করেছে ঢাকার
গণজাগরণ মঞ্চ। সমাবেশ থেকে আগামী বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার জন্য
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে এ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইয়াসমিন
হত্যার সময় রাস্তায় নেমেছেন। আমরা চাই, তিনি তনু হত্যার বিষয়ে নামবেন। তনু
যদি মন্ত্রী, রাজনীতিবিদদের মেয়ে হতো, ক্যান্টনমেন্ট থেকেও কতজনকে ধরে নিয়ে
যেত। কিন্তু তনুর জন্য কাউকে ধরবে না।’ সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি
লাকী আক্তার, ভাস্কর রাশা, ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব প্রমুখ
বক্তব্য দেন। এর আগে সকালে মঞ্চের কর্মীরা ঢাকার শাহবাগ থেকে লংমার্চ শুরু
করেন। এটি কুমিল্লায় আসার পথে বিভিন্ন স্থানে পথসভা করে। দুপুর ১২টার দিকে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে পথসভা করে গণজাগরণ মঞ্চ।
ঢাকার
বাইরে: সোহাগী হত্যার বিচার দাবিতে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরো
পয়েন্টে দুপুরে সম্মিলিত শিক্ষার্থী ফোরাম এবং বিকেলে প্রথম আলো বন্ধুসভা,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা জেলা সমিতি, বাংলাদেশ
মহিলা পরিষদ, লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সম্মিলিতভাবে
মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। দুপুরের কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন রাজশাহী
রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, বিকেলে নাট্যকার মলয়
ভৌমিক প্রমুখ। একই স্থানে মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী রাজশাহী
মহানগর শাখা। আর আলুপট্টি মোড়ে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার
ফেডারেশন ও নাট্য আন্দোলন মঞ্চ।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল
দুপুরে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করে। নরসিংদীতে
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে সংগঠন
‘সৈয়দপুর শিক্ষা নগরী’, ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’ ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। এ
সময় বক্তারা সোহাগী হত্যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য
করেন।
পঞ্চগড়ের পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে সকালে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
করেছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। এতে বন্ধুসভার সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন
শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। দুপুরে মানববন্ধন হয়েছে সুনামগঞ্জ শহরে
‘কর্ণিকার মুক্ত স্কাউটস’ গ্রুপের আয়োজনে। লক্ষ্মীপুরে মানববন্ধন হয়েছে
বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে।
এ ছাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
শহরের শহীদ সাটু হলের সামনে সংগঠন ‘জাগো নারী বহ্নিশিখা’ ও প্রথম আলো
বন্ধুসভার আয়োজনে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র কলা ভবনের সামনে
লোকপ্রশাসন বিভাগের উদ্যোগে, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্র ইউনিয়ন জেলা
সংসদের উদ্যোগে, জামালপুরে বকশীগঞ্জ-সানন্দবাড়ি মহাসড়কের নঈম মিয়ার
বাজারে, ময়মনসিংহে ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে, ফরিদপুরে প্রেসক্লাবের সামনে,
দিনাজপুরে প্রেসক্লাবের সামনে, পিরোজপুর শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়ক ও
ভান্ডারিয়া শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মিছিল
হয় গাইবান্ধা শহরে। গাইবান্ধা আহম্মদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতন স্কুল ও
কলেজের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করে। মিছিলকারীরা শহরের প্রধান সড়ক
ঘুরে প্রতিষ্ঠানটির চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। খুলনার শিববাড়ি মোড় ও
দৌলতপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সভা হয়। সমাবেশ ও
মানববন্ধন হয় ভোলা শহর এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলা শহরে।
বরিশাল নগরের নতুন
বাজার এলাকায় ডা. বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের সামনে মানববন্ধন ও
বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্রজমোহন কলেজের এই ছাত্রীনিবাসের আবাসিক
শিক্ষার্থীরা। নগরের সদর রোডে বিবির পুকুর পাড়ে মানববন্ধন করেন বরিশাল
গণনাট্য সংস্থার সদস্যরা।
কিশোরগঞ্জে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গুরুদয়াল
সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে। মুন্সিগঞ্জ থিয়েটার সার্কেলের আয়োজনে
মানববন্ধন, প্রতিবাদ মিছিল ও সভা হয় শহরের সুপার মার্কেট চত্বরে। চাঁদপুরে
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ-সমাবেশ হয় শহরের শপথ চত্বরে। রংপুর প্রেসক্লাবের
সামনে মানববন্ধন করে জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও সমাজতান্ত্রিক
মহিলা ফোরাম। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের
আয়োজনে হয় মানববন্ধন ও কালো পতাকা মিছিল। একই স্থানে মানববন্ধন করে
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ:
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় বেলা ১১টা থেকে দুইটা
পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল করেন জেলার আন্দোলনরত
শিক্ষার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন গিয়ে
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
মানবাধিকার
সংগঠনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষ থেকে বিকেলে
সোহাগী হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ তদন্তকারী
অনির্বাণ সাহা ও তদন্তকারী লিয়াকত আলী। তাঁরা সোহাগীর পরিবারের সদস্যদের
সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির
সভাপতি সালমা আলীর নেতৃত্বে একটি দলও।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা)।
FB Fan PAGE mNews24