Translate
Sunday, March 27, 2016
দেশে ফিরল বাংলাদেশ দল সামনে ভালো সময়ের আশায় মাশরাফি
নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করল জেট এয়ারওয়েজের নাইন ডব্লু ২৭৪ উড়ান। ঢাকার সকাল ততক্ষণে চনমনে রোদে আলোকিত। কিন্তু বিমান থেকে নেমে আসা মুখগুলোয় যেন বিষণ্নতা। একটু পর ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অবশ্য অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা অভিজ্ঞতা আর আশার কথাই বললেন। তুলে ধরলেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রাপ্তি, ‘ভারতের সঙ্গে যেভাবে হেরেছি তাতে আমরা খুবই হতাশ হয়েছি। তবে এর বাইরে অনেক ইতিবাচক ব্যাপারও ছিল, যেগুলো সামনের টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলোয় আমাদের সাহায্য করবে।’
বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে পরশু রাতে। গতকাল সকালে দল দেশে ফিরেছে। উড়ানটা মাত্র ৩৫-৪০ মিনিট হলেও কলকাতা ছাড়ার আয়োজন শুরু করতে হয়েছে ভোর থেকেই। হতাশার চেয়ে সেই ক্লান্তির ছাপটাই বেশি ছিল খেলোয়াড়দের মধ্যে। হতাশার তেমন কিছু নেইও।
মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল মাথা উঁচু করেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে এসেছে। প্রথম পর্ব পেরিয়ে দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ সুপার টেনে উঠেছে দারুণভাবে। এই পর্বে কোনো জয় না পেলেও কাঁপিয়ে দিতে পেরেছে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে।
সুপার টেনে অন্তত দুটি ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ দলের। সেটা করতে না পারার ব্যর্থতা অধিনায়কও মানেন। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও যে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন ভালো খেলেন, এশিয়া কাপের পর বিশ্বকাপেও তা প্রমাণিত। মাশরাফির চোখে ভারত থেকে নিয়ে আসা সবচেয়ে বড় অর্জন এটাই, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য আমরা একটা ভিত তৈরি করতে পেরেছি বলে মনে করি। এখন থেকে আমরা যাদের বিপক্ষেই খেলব, ছোটখাটো ভুল না করলে আমাদের সঙ্গে যে কারও জেতা কঠিন হবে। এটা আমার বিশ্বাস, খেলোয়াড়দের মধ্যেও এই মানসিকতা তৈরি হওয়া জরুরি।’
প্রাসঙ্গিকভাবেই এসেছে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির বোলিং নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাঠের বাইরের ঘটনাপ্রবাহ। দলকে ওই ঘটনা চাপে ফেলেছে স্বীকার করেও অধিনায়ক বললেন সেই চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার কথা, ‘ওরা (তাসকিন-সানি) দুজনই ফর্মে ছিল। ওদের অনুপস্থিতিতে তাই চাপ আসাটা স্বাভাবিক। পরে তামিমও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে পারল না। ওই ম্যাচটি আমাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। তবু পরের ম্যাচে আমরা খুব ভালোভাবে ফিরে এসেছি। শেষ পর্যন্ত ফল আমাদের পক্ষে না এলেও আমার মনে হয় অন্য যেকোনো দিনই ম্যাচটি আমরা জিততে পারব। দুর্ভাগ্যক্রমে ওই দিন আমরা শেষটা ভালো করতে পারিনি।’
তাসকিনের বোলিং নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ভারতে বসেই আইসিসির কড়া সমালোচনা করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। তাসকিনের প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। মাশরাফিও বললেন, তাসকিনের নিষেধাজ্ঞা একটা বড় ধাক্কা হয়ে এসেছিল দলের কাছে। তাঁর ভাষায়, ‘সানির বিষয়টা সে নিজে এবং আমরাও গ্রহণ করে নিয়েছি। কারণ সানিরটা (বোলিং অ্যাকশনের ত্রুটি) যে পর্যায়ে ছিল, সে নিজেও জানে ওকে আবার অ্যাকশন ঠিক করে আসতে হবে। সানিও এর জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তাসকিনের বিষয়টি আমাদের জন্য একেবারেই দুঃখজনক।’ ভারতে বাংলাদেশ দলের বাইরে অন্যরাও নাকি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি তাসকিনের নিষেধাজ্ঞার খবর, ‘শুধু আমরা নই, বাইরের লোকেরাও বলেছেন। বিশেষ করে যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরাও কিন্তু একমত ছিলেন যে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনে কোনো সমস্যা নেই।’
বিসিবি তাসকিনকে ফিরে পাওয়ার জোর লড়াই চালিয়েছে দলের অনুরোধেই। মাশরাফিই বলেছেন, ‘ওর স্বাভাবিক ডেলিভারিতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তিনটি বাউন্সারে সমস্যা পাওয়া যায়। এ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন মনে এসেছে। আমরা সেসব বিসিবিকে জানিয়েছি...কোনোভাবে তাসকিনকে পেতে পারি কি না। বাউন্সারেই যখন সমস্যা এসেছে, ওই ডেলিভারিটা ছাড়া ওকে খেলাতে পারি কি না।’ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি সেই চেষ্টা। সানি-তাসকিনকে হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যায় সব পরিকল্পনা। অধিনায়কের ভাষায়, ‘শেষ আটটি ম্যাচে শুধু বাংলাদেশের পক্ষেই নয়, ওর ইকোনমি রেট ছিল বিশ্বেরই সেরা। তাসকিনের মতো খেলোয়াড়কে হারানোটা কঠিন।’
খারাপ সময়ে বাংলাদেশ দল সবচেয়ে বড় সমর্থনটা পেয়েছে ভক্ত-সমর্থকদের কাছ থেকে। অথচ ভারত ম্যাচে তীরে এসে তরি ডুবিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের হতাশ করলেন ক্রিকেটাররা। দর্শকদের কষ্টটা মাশরাফিও বোঝেন। বোঝেন বলেই প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, সামনে আমরা আরও কঠিন ম্যাচ জিতব। এর চেয়ে অনেক ভালো সময় এই ছেলেরাই এনে দেবে। এটা আমার বিশ্বাস।’
wWw.FB.Com/mNews24
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment