Translate

Monday, March 28, 2016

ঋণের সুদের হার কমাতে সংসদীয় কমিটির উদ্যোগ

ঋণের উচ্চ সুদ হারের লাগাম টেনে ধরতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডাকা হবে। সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে সুপারিশ আকারে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উদ্দেশ্য, যাতে ইচ্ছেমতো বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ ও অগ্রিমের সুদের হার আরোপ করতে না পারে। এছাড়া সুদ হারে ব্যাংকগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও বেশির ভাগ ব্যাংক উচ্চ সুদের লাগাম ধরে বসে আছে। ফলে উদ্যোক্তারা এভাবে ঋণ নিয়ে শিল্প দাঁড় করাতে পারছে না। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা তো দূরের কথা উচ্চ সুদের চাপে চিড়েচ্যাপটা হতে হচ্ছে তাদের। দায়দেনা নিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। এসব কারণে যেসব ভালো উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করতে চান তারাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এতে করে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবার সুদের হার কমাতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এ প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমএ মান্নান রোববার যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে এখনও আলোচনা শুরু হয়নি। আলোচনার আগে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, সুদের হার আলাদাভাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো কমাতে পারবে না। সার্বিকভাবে গোটা ব্যাংকিং খাতে সুদের হার একটা বান্ডেলে থাকবে। কোনো ব্যাংক ১০ শতাংশ হারে, আবার কেউ ১৩ শতাংশ হারে সুদ নিয়ে বাজারে ব্যবসা করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোতে সুদের হার নির্ধারণ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে অনুযায়ী ব্যাংকগুলো তাদের সুদ হার ঠিক করে নেয়। আমাদের এখানে সেই ভূমিকা শক্তিশালী না থাকায় এ সুযোগ নিচ্ছে অনেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদ এবং সুদ হারের ভিন্নতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ওই বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মো. আবদুর রাজ্জাক রোববার যুগান্তরকে জানান, আমরা প্রথম থেকেই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বলে আসছি। সংসদীয় কমিটির একাধিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এখনও এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোথাও সুদের হার এত বেশি নেই। সংসদীয় কমিটির মতে, অতিরিক্ত ঋণের সুদের হার বিনিয়োগে প্রধান প্রতিবন্ধক। এ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই বৈঠকে ব্যাংক ঋণ ও অগ্রিম সুদের হার আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সুদের হার ক্রমান্বয়ে কমছে বলে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বৈঠকে আভাস দেয়া হয়। বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক শিল্পে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমে আসার বিষয়টিও নজরে আনা হয়। স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, সুদের হার নির্ধারণ হয় মার্কেটের মাধ্যমে। তবে সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে নন-পারফর্মিং ঋণ। যে কারণে সুদের হার কমানো যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোতে কস্ট অব ফান্ড ধীরে ধীরে কমে আসছে। ডিপোজিট রেট ও স্প্রেডও আগের চেয়ে কমে আসছে। ভালো ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসছে। তবে সুদের হার কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফরেন এক্সচেঞ্জ ঋণ তৈরি করে সুদের হার কমানো হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো জানুয়ারি থেকে ২ শতাংশ করে সুদের হার নামিয়েছে। ড. আতিউর রহমান বলেন, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরের শেষদিকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে স্পর্শ করবে।
জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কৃষি ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতার বিষয়টি আলোচনা হয়। কৃষি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম তুলে ধরা হয়। এছাড়া দুগ্ধ ও পোলট্রি শিল্পে ঋণের অভাবে পণ্য প্রক্রিয়াজাত করা যাচ্ছে না তাও বলা হয়। বৈঠকে আরও বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংকের সুদের হারে ভিন্নতা আছে। কোথাও ৮ শতাংশ, কোথাও ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, কৃষি এবং শিল্পক্ষেত্রে আরও বেশি সহযোগিতার আগ্রহ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ফলে সুদের হার কমাতে হবে। এজন্য ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিম সুদের হার বিষয়ে পরবর্তীকালে প্রাইভেট ব্যাংকসহ আবারও আলোচনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ওই বৈঠকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের এ সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
ওই বৈঠকে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র অগ্রণী ব্যাংক কৃষি খাতে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। বর্তমান ঋণ প্রদান আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঋণের বিপরীতে মাত্রাতিরিক্ত সুদ আদায়ের নামে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যথেচ্ছ ব্যবসা করছে। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি মানছে না। হিসাবের মারপ্যাঁচের মাধ্যমেও বাড়তি সুদ আদায় করছে। ব্যাংকগুলো সুদ হিসাব পদ্ধতিতে ফাঁকি দিতে তিন মাস পরপর সুদকে মূলধনে রূপান্তর করছে। মূলধনের পাশাপাশি সুদের ওপরও সুদ আরোপ করছে, যা আঞ্চলিক ভাষায় ‘চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপ বা মহাজনী ব্যবসা।’ এছাড়া ব্যাংকগুলো নিয়মিতভাবে ঋণের মূল টাকা থেকে সুদ বা অন্যান্য সার্ভিস চার্জ আদায় করছে। এতে গ্রাহক ঋণের পুরো টাকা হাতে না পেলেও পুরো ঋণের ওপর সুদ দিতে হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় সুদের হার আরও বেড়ে যাচ্ছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, এত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। করলেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। তারা অবিলম্বে সুদের হার কমিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। শিল্পায়ন হবে না। কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। ঋণের সুদের হার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোতে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে এই হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও ‘উপরি’ খরচ বেশি পড়ায় ঋণের ব্যয় বাড়ছে, যা সুদের হার বাড়াচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্দেশ দিয়ে ব্যাংকের সুদের হার কমানো যাবে না। তবে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে সুদের হার কমানো যেতে পারে। পাশাপাশি এক্ষেত্রে সরকার সরাসরি যেটি করতে পারে তা হচ্ছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে ভর্তুকির ঘোষণা দেয়া। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সুদের হার ৯ শতাংশ হলে সরকার এক শতাংশ ভর্তুকি দিতে পারে। এতে উদ্যোক্তাদের কাছে সুদের বোঝা কমে আসবে।                   
                                                              wWw.FB.Com/mNews24

No comments:

Post a Comment