Translate

Thursday, March 24, 2016

আহা, এ কষ্ট কোথায় রাখি


ঢাকা: তিন বলে দরকার দুই রান। সেখানে তিন বলে নেই তিন উইকেট। দুটি ক্যাচ, একটি রান আউট। শেষ বলে ব্যাট ছোয়াতেই পারলেন না শুভাগত। তাও দিলেন মরণপণ দৌড়। মুস্তাফিজও তাই। ঠাণ্ডা মাথার ধোনি দূর থেকে স্ট্যাম্প ভাঙতে পারতেন, কিন্তু তা না করে দৌড়ে এসে নিশ্চিত হয়েই গুড়িয়ে দিলেন স্ট্যাম্প।
এক রানের জয় পেল ভারত। ততক্ষণে বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম দর্শকদের গর্জনে ফেটে পড়ছে। ধোনিদের উল্লাস তখন বাধনহারা। দিকভ্রান্তের মতো ধোনি-কোহলি-হার্দিকরা দৌড়াচ্ছে জয়ের আনন্দে। যেন বিশ্বকাপই জেতা হয়ে গেছে তাদের।
আর বাংলাদেশ শিবিরে নিকষকালো হতাশার ছায়া। সবার মুখ মলিন। ‘এত কাছে তবু দূরে’র যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট সবাই। হাতের মুঠোয় আসা জয় ফসফে বেরিয়ে গেল চরম নির্বুদ্ধিতায়। মাত্র এক রানের হার। সঙ্গে বিশ্বকাপ থেকেও বিদায়।
অথচ ম্যাচটিতে জিততে পারলে চিত্রটা কি সুন্দরই না হতো। সেমির সম্ভাবনা জিইয়ে থাকত। শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে কে জানে সব সমীকরণ ঠেলে শেষ চারেও উঠে যেতে পারত মাশরাফিরা। কিন্তু হায়, ২৬ মার্চ কলকাতার ইডেন গার্ডেনে কিউইদের বিরুদ্ধে টাইগারদের নামতে হবে নিয়মরক্ষার ম্যাচ খেলতে। ভাগ্য বড়ই নির্মম ও কঠিন।
ওয়ানডেতে পারলেও টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সামনে দুর্বোধ্যই ছিল ভারত। কিছুদিন আগে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনালে হেরে তা বুজেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু বুধবার বেঙ্গালুরুতে টি২০ বিশ্বকাপের ম্যাচে ভাগ্য বিধাতা সবই দিচ্ছিল বাংলাদেশকে উজার করে। সুযোগটা নিতে পারেনি মাশরাফিরাই।
টানা টস হারে ক্লান্ত মাশরাফি এদিন টস জিতলেন। বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে বল হাতে আগুণ ঝড়ালেন মাশরাফি-আল আমিনরা। ফলে বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইন আপ নিয়েও ভারত করতে পারল মাত্র ১৪৬ রান। মাশরাফিতো টি২০ বোলিং ক্যারিয়ারে নতুন রেকর্ড গড়লেন কোন চার-ছক্কা হজম না করে। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়েছেন, তবে ভারতীয় কোন ব্যাটসম্যানই পারেননি তাকে সীমানা ছাড়া করতে। সাকিব ৪ ওভারে দিলেন মাত্র ২৩, উইকেট একটি, চার হজম করেছেন মাত্র দুটি। সব মিলিয়ে বোলিং বিভাগের নৈপুণ্য ছিল চোখে পড়ার মতো।
অথচ বেঙ্গালুরুর ইতিহাস ছিল ভিন্ন। এই মাঠে আগে যারা ব্যাট করেছে, তাদের গড় স্কোর ১৮৯। ভারত সেখানে কষ্টেসৃষ্টে করল ১৪৬।
ভাগ্য বিধাতা বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল পরের ইনিংসেও। না হলে দুইবার লাইফ কেন পাবে তামিম। কেন সহজ কয়েকটি ক্যাচ হাত গলে বেরিয়ে যাবে ভারতীয় বোলারদের হাত থেকে। তবে সেটা যে ছিল অতিরিক্ত চাপেই, তা বলাই বাহুল্য। ভাগ্যকে অবশ্য দুষতে পারেন সাব্বির। পপিং ক্রিজেই ছিলেন, তবে শূন্যে থাকা অবস্থায় হয়েছেন স্ট্যাম্পিং, ব্যাড লাক।
তারপরও সবার চোখ আটকে যাচ্ছে শেষ ওভারেই। মানতে কষ্ট হচ্ছে অভিজ্ঞ মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর কাণ্ডজ্ঞানহীন শট। অথচ জয়ের নায়ক হতে পারতেন মুশফিকই। শেষ ওভারে দুই চার হাঁকিয়ে জয়টা নিয়ে এসেছিলেন হাতে মুঠোয়। চতুর্থ ও পঞ্চম, দুটো বলই ফুলটস দিলেন হার্দিক পান্ডে। লোভে পড়লেন দুই ভাইরা ভাই। বিদায় নিলেন পরপর দুই বলে। প্রতিপক্ষের হাতে ক্যাচ দিয়ে। শেষটা সুপার ওভারে গড়ালেও হয়তো আফসোস কম থাকত। কিন্তু পারেননি শুভাগত।
তাসকিন ও সানিকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে কেঁদেছিলেন মাশরাফি। অসিদের সঙ্গে হারলেও লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে জিততে পারলে সব কষ্ট উবে যেত, চলার পথে এই ম্যাচই হতো প্রেরণার। কিন্তু এখন গোপনে মাশরাফির চোখ বেয়েই যে অশ্রু ঝড়ছে না, তা বলবে কে। যদিও মাশরাফি ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘এই হারে কাউকে দায়ী করছি না। সবাই আক্ষেপে পুড়ছে।’
২০১২ সালে ঘরের মাঠে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে দুই রানের হারে সাকিবের বুকে মাথা রেখে কেঁদেছিল মুশফিক, সঙ্গে কেঁদেছিল গোটা দল, গোটা দেশ। বছর চারেক পর বেঙ্গালুরুতে তেমনই আবহ। তবে আফসোস-আহাজারির সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে ক্ষোভ। তিন বলে দুই রান না করতে পারলেন না মুশফিক ও রিয়াদ, উল্টো উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন। অথচ সেখানে সিঙ্গেল খেললেও হতো। ভক্তদের ক্ষোভ-আহাজারি প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে, মুশফিক-রিয়াদ এই বেদনার যন্ত্রণায় কতদিন গুমড়ে গুমড়ে মরবে, তা কে জানে।
বাংলাদেশ হারলেও টি২০ ক্রিকেটে নতুন রেকর্ড হয়েছে এদিন। ম্যাচের শেষ তিন বলে আউট মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক ও মুস্তাফিজ।শেষ তিন বলে তিন উইকেট, টি২০ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ঘটনা। টি২০ ক্রিকেটে এক রানে জয়-পরাজয়ের ঘটনা নবমবারের মতো ঘটল। টি২০ বিশ্বকাপে যা চতুর্থ ঘটনা। এর মধ্যে দুইবারই জিতল ভারত, আগেরবার ২০১২ সালে কলম্বোতে তারা ১ রানে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো হারল ১ রানে। আগেরটি ছিল দুই রানের হার, সেটি ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করতে নেমে করেছিল ১৬৮ রান, জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ১৬৬।
তবে শুধু টি২০ কেন, ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটেও এক রানের এমন অবিশ্বাস্য হারের নজির নাই বাংলাদেশের। আহা, এ কষ্ট কোথায় রাখি।

আ.লীগ-বিএনপিকে এক করে দিল তনু


কুমিল্লা : সোহাগী জাহান তনুর খুনিদের বিচার দাবিতে সারাদিনই উত্তাল ছিল কুমিল্লার রাজপথ। মাঠে নেমেছিল তনুর ৩০ হাজার সহপাঠী। বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে বসে থাকতে পারেননি রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও। তনুর বন্ধুদের সঙ্গেই হাতে হাত ধরে রাজপথে নেমে আসেন সব ভেদাভেদ ভুলে। এক কাতারেই দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি, ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদলের নেতারা। 
এ দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষের মাঝে আন্দোলনের শক্তিটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদেরও বার বার চোখ মুছতে দেখা গেছে, তনুর পরিনতি ভেবে। আর তাইতো বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাট্যসংঠনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন শহরের পুলিশ কর্তারাও।  
তনু হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার কুমিল্লার কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরের রাজপথে নেমে আসে সর্বস্তরের মানুষ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় নগরীতে কিছু সময়ের জন্য যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এতে কাউকেই অস্বস্তিবোধ করতে দেখা যায়নি। বরং গাড়ি থেকে নেমে আন্দোলনে অংশ নিতেই দেখা গেছে অনেককেই। 
সকালে এ আন্দোলন শিক্ষার্থীরা শুরু করলেও সংহতি জানান কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মো. ওমর ফারুক, সাংস্কৃতিক সংগঠক শহীদুল হক স্বপন, দক্ষিণ জেলা যুবদল সভাপতি আমিরুজ্জামান আমির, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল আজিজ সিহানু, ছাত্রলীগ নেতা রোকন উদ্দিন, শাওন প্রমুখ।  
কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. ওমর ফারুক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তনু হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে বলেন, ‘সেনাবাহিনীদের এলাকার নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে তনুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ 
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামাল কল্লোল এবং পুলিশ সুপারের কাছে স্মরকলিপি প্রদান করে।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার এতোদিন অতিক্রম হলেও প্রশাসন নিরব ভূমিক পালন করছে। তনু হত্যাকারীদের ফঁসিতে না ঝুলিয়ে রাজপথ থেকে কেউ আমাদের সরাতে পারবে না।
তনুর সহপাঠীরা বলেন, প্রশাসন যদি তনু হত্যাকারীরে গ্রেপ্তার না করে নিরব ভূমিকা পালন করে, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে ভিক্টোরিয়া কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, রেল লাইনসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ডিসি অফিস অবরোধ, থানা অবরোধ, শিক্ষকদের কর্মবিরতীসহ প্রয়োজন হলে আমরণ অনশন করার সিদ্ধান্ত নেবো।
কান্দিরপাড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে এসে দুঃখ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সহ-পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ, কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি আবদুর রব। তারা দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করার আশ্বাস দেন।
এদিকে সন্ধ্যায় নগরীর কান্দিরপাড়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হয়। এতেও দলমত নির্বিশেষে অনেকেই অংশ নেন। 
নিহতের পরিবারের সূত্র জানায়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্য, নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু গত রোববার সন্ধ্যায় টিউশনি করে বাসায় ফিরছিল। পথে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় তাকে। 
পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে সোহাগীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। কালভার্টের পাশে ঝোপের ভেতর মাথা থেতলানো সোহাগীর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ পড়েছিল। 
সোমবার নিহতের বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের চারদিনেও কাউকে গ্রেপ্তার বা হত্যার রহস্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
Dipu Chowdhury 

আশুলিয়ায় বিকাশ কর্মীকে গুলি করে টাকা ছিনতাই



সাভার (ঢাকা) : আশুলিয়ার ভাঁদাইল এলাকা থেকে মো. আলফাজ (২৬) নামে এক বিকাশ এজেন্ট কর্মীকে গুলি করে ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। 
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত বিকাশ কর্মী মো. আলফাজ পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি সদর থানার আলমগীর শরীফের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় বসবাস করতো।
গুলিবিদ্ধ বিকাশকর্মী আলফাজ জানায়, সন্ধ্যায় ভাঁদাইল এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে বিকাশের টাকা তুলে রিকশায় জামগড়া এলাকার নিজ অফিসে ফিরছিলেন তিনি। পথিমধ্যে মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্ত তার গতিরোধ করে। এ সময় তারা বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তিনি পালাতে চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তার পা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় তার বাম পায়ের উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যায় তারা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাবিব ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করে। 
আহতের চাচাতো ভাই আশরাফ জানান, আলফাজ বিকাশ এজেন্টের হয়ে ডিএসও পদে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিল। প্রতিদিনের মতো আজও সে টাকা কালেকশনের কাজে পশ্চিম ভাঁদাইল এলাকায় যায়। পরে তাকে মুঠোফোনে আলফাজের গুলিবিদ্ধের খবর জানায় স্থানীয়রা। 
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিনুল কাদির জানান, আহত বিকাশকর্মীর পরিবার ও কর্তৃপক্ষের কেউ এখনও থানায় অভিযোগ দেয়নি। তবে অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
Dipu Chowdhury